Monday, December 3, 2012

হল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে, বাবা-মার খোঁজে হতভাগ্য যুবক ক্রিস ইমাম


নেত্রকোনার আলো নিউজ ডেস্ক : তিনি হল্যাল্ডের নাগরীকজন্মসূত্রে বাংলাদেশীজন্মের পর প্রায় ৩৫ বছর কেটেছে সেখানেইহল্যান্ডে যাদের কাছে তিনি মানুষ হয়েছেন তারাই ক্রিস ইমামের বাবা-মা এই বিশ্বাস ধারণ করেই তাঁর বেড়ে ওঠাকিন্তু হটাত করেই যেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলক্রিস কোন কারণে জানতে পারেন তাঁর বাবা-মা বাংলাদেশেহল্যান্ডে উইলিয়াম হুরমান ও ক্যাটরিনা হুরমান-এর পালিত সন্তান তিনিতাহলে প্রশ্ন কে তাঁর
পিতা মাতাহতভাগ্য এই যুবকের বাবা-মার দেওয়া নাম ছিল ইমাম মিয়াঅভাবের তারনার তাকে হল্যান্ডের এক প্রবাসী দম্পতির কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন জন্মদাতা পিতাএরপর ইমাম মিয়া বেড়ে ওঠেন ক্রিম ইমাম হুরমান নামে
অনুষন্ধানে ক্রিস শুধু বাবার নাম জানতে পারেন নাসের মিয়াপেষায় তিনি ছিলেন নৌকার মাঝিথাকতেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায়এর বাইরে বাবা সহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের খোঁজে পেতে তেমন কোন তথ্য ক্রিসের হাতে নেইতবুও সমান্য উস নিয়েই বাবা-মার খোঁজে হতভাগ্য যুবক ক্রিস এখন বাংলাদেশেস্বজনদের খোঁজে পেতে চষে বেড়াচ্ছেন রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তপ্রশ্ন হলো শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারবেন তো ক্রিস
সম্প্রতি এক বান্ধবীকে নিয়ে ঢাকায় এসেছেন ক্রিস ইমামওঠেছেন গুলশানে এক প্রবাসী বন্ধুর বাসায়বাবা-মা সহ পরিবারের সদস্যদের খোঁজে পেতে তিনি ঢাকার বিভিন্ন পরিচিত লোকদের সহযোগিতা নিয়েছেনপাশাপাশি বিভিন্ন মাধ্যমে মিডিয়ার সহযোগিতা নেওয়ারও চেষ্টা করছেন তিনিতাঁর কথা একটাই প্রকৃত বাবা-মা সহ পরিবারের সদস্যদের পেতে চান তিনিসন্তানের দাবি নিয়ে হাজির হতে চান বাবা-মায়ের সামনেচমক দিতে চান সবাইকেপ্রতিষ্ঠা করতে চান নিজের পিতৃ পরিচয়
প্রায় এক সপ্তাহের বেশি সময়ের অনুষন্ধানে ক্রিস জানতে পেরেছেন তাঁর বাবা এখনও বেঁচে আছেনতবে কোথায় আছেন তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে নাতাকে সহায়তা যারা করছেন তাদের মধ্যে একজন জানিয়েছে ক্রিসের বাবার সন্ধান পাওয়া গেছেগেল রমজানেও তাকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় দেখা গেছেকেউ বলছেন নাসের মিয়ার বাড়ি ফরিদপুরেকেউ বলছেন অন্য কোথাও
বাবা ইউলিয়ামের কাছ থেকে ইমাম মিয়া জানতে পেরেছেন, বাংলাদেশের কোন এক খুপরি ঘরে তাঁর জন্মজন্মের মাত্র চার সপ্তাহের মাথায় বাবা নাসের মিয়া অভাবের তারণায় তাকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন হল্যান্ডের এক প্রবাসী দম্পতির কাছেতখন তারা বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেনসেই থেকে বাংলাদেশে জন্ম নেয়া ইমাম মিয়া হয়ে গেলেন ক্রিস ইমাম হুরমান১৯৭৭ সালের ১০ মে ইমামের জন্মবাবা নাসের মিয়ার সড়ক দুর্ঘটনায় এক পা ক্ষতিগ্রস্থ হয়এর পরও এক পায়ে ভর দিয়ে কিছুদিন রাজধানীর বসিলা, হাজারীবাগ, মনেশ্বররোড, মোহাম্মদপুর সহ আশাপাশের এলাকায় গুদারাঘাটে নৌকায় মানুষ পারাপার করতেনতবে ক্রিস ইমামের পাসপোর্টে তাঁর শিশুকালের ঠিকানা হিসেবে মনেশ্বররোড-মোহাম্মদপুর উল্ল্যেখ রয়েছেঅভাবে পড়ে বাবা তাকে বিক্রি করে দিয়েছেন? তাতে কিএকথা জানার পরও ক্রিস একটুও বিচলিত ননপরিবারের প্রতি কোন অভিমান বা রাগ নেই তাঁরপুরো বিষয়টিকে সহজভাবেই মেনে নিয়েছেন তিনি
ক্রিস ইমাম জানিয়েছেন, সম্প্রতি পালিত বাবা-মা জানিয়েছেন তাঁর প্রকৃত বাবা-মা বাংলাদেশীতবে পালিত বাবা-মা চান ক্রিস তাঁর পরিবারকে খোঁজে পাকক্রিসকে বাবা উইলিয়াম জানান, নাসের মাঝি যখন দুর্ঘটনার পা হাড়ানোর পর সংসারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকারএক পর্যায়ে নৌকা চালানোও তাঁর বন্ধ হয়ে যায়অর্থাত পরিবারের চাকা আর চলে নাএকবেলা খেলে আরেকবার খাওয়ার নিশ্চয়তা নেইক্রিস ছাড়াও নাসের মাঝির ছিল আরো দুই সন্তানতাই আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হয়েছিল ইমামেরস্থানীয় বেবী হোমের মাধ্যমে হুরমান দম্পতি খোঁজ পান নাসের মাঝির পরিবারের  
অল্প টাকার বিনিময়ে ইমাম মিয়াকে হল্যান্ডের এই দম্পতির কাছে বিক্রি করতে রাজী হন নাসের মাঝিতখন ইমামের বয়স ছিল দেড় মাসক্রিস ইমাম তাঁর প্রকৃত বাবা সম্পর্কে এও জানতে পারেন, নাসের মাঝির বাড়ি ছিল ঢাকার বাইরের কোন এক জেলায়  অভাবের তাড়নায় পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনিথাকতেন মোহাম্মদপুরের মনেশ্বর রোডের কোন এক বাড়িতে
এদিকে ইমাম মিয়াকে কেনার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরী শেষে তাকে নিয়ে হল্যান্ডে চলে যান বাবা ইউলিয়াম হুরমান ও মা ক্যাটরিনা হুরমানহল্যান্ডের জুটেমিয়ার শহরে পালিত বাবা-মার কাছে ইমাম মিয়ার বেড়ে ওঠাছোট বেলা থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী মাঝির ছেলে ক্রিসঅর্থনীতিতে পিএইচডি শেষে লন্ডনের একটি ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে বর্তমানে তিনি কর্মরতকিন্তু ইমামের মনে এখন একটাই চেষ্টা বাবা-মা সহ তাঁর পরিবারকে ফিরে পাওয়াতাই বন্ধু অনিতাকে নিয়ে ক্রিস এখন রাজধানী ঢাকায়
ইমাম মিয়া বলেন, বাংলাদেশে আমার জন্মতাই মনে প্রাণে আমি একজন বাঙালিদেশে এসেছি সত্যিকারের বাবা-মায়ের খোঁজেপরিবারের সদস্যদের খোঁজে পেতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেনইতোমধ্যে ঢাকার বেশ কয়েকজন বন্ধু তাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেনতাদের নিয়ে সম্ভাব্য জায়গায় পরিবারের সন্ধ্যানে এখন ক্রিস
বাংলাদেশে ক্রিসকে সহয়তাকারী আহমেদ হোসেন বাবু জানান, ক্রিস দেশে আসার পর সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে অনুষন্ধান চালিয়েছেন তারাএর মধ্যে রাজধানীর রায়েরবাজার এলাকায় দুই দিন খোঁজ করেন ক্রিসের পরিবারেরস্থানীয়দের অনেকেই ক্রিসের বাবা নাসের মাঝিকে চিনতে পেরেছেনতারা জানিয়েছেন, গেল রমজানেও লাঠিতে ভর দিয়ে এই এলাকায় চলতে দেখেছেন তাকেএরপর থেকে নাসের মাঝির খোঁজ নেইতিনি বেঁচে আসেন নাকি মারা গেছেন তাও জানেন না কেউএলাকায় ক্রিসের পরিবারের সদস্যদের খোঁজ মেলেনিস্থানীয়দের কেউ কেউ বলেছেন, নাসেরের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরকেউ বলছেন নোয়াখালী
বাবু জানান, বাবা-মা সহ পরিবারের খোঁজ পেতে কান্নাকাটি করছেন ক্রিসকিন্তু বেশিদিন ছুটি না থাকায় হয়ত দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে ফিরতে হবেএবার পরিবারকে খোঁজে না পেলে আবারো বাংলাদেশে আসবেন ক্রিস ইমাম

কেউ তাঁর বাবা-মা সহ পরিবারের খোঁজ পেলে নেত্রকোণা আলোর অফিসে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা গেল।